মোঃ এ কে নোমান, নওগাঁ-
নওগাঁয় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিভিন্ন সমস্যা, অভিযোগ ও পরামর্শ শোনার লক্ষ্যে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) পিএলসির উদ্যোগে গ্রাহকশুনানি ও রাজস্ব সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় শহরের নেসকো প্রকৌশলীর কার্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় নেসকোর বিভিন্ন পর্যায়ের বিদ্যুৎ গ্রাহক, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী নেসকো অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন। জেলা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফরিদুল হাসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ, বিলিং, মিটারিং ও অন্যান্য সেবার মান নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়।
প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, “নেসকো সবসময় গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করছে। ডিজিটাল ও প্রিপেইড মিটার নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি কাজ করছে। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন, ডিজিটাল মিটারে বিল বেশি আসে, তাই আমরা প্রিপেইড মিটার স্থাপন করছি। তবে, অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে যে, প্রিপেইড মিটারের টাকা শেষ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বাস্তবে, টাকা শেষ হয়ে গেলেও গ্রাহক ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে টাকা রিচার্জ করলে সেই বকেয়া কেটে নেওয়া হবে। এতে কোনো অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে না।”
তিনি আরও বলেন, "আমরা চাই গ্রাহকরা নিজেদের মিটারের রিডিং দেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অনেক সময় দেখা যায়, গ্রাহকরা অভিযোগ করেন যে তাদের বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে, কিন্তু তারা নিজেরা মিটার চেক করেন না। তবে, এক্ষেত্রে অফিসেরও কিছু দায় আছে। মিটার রিডিং সংগ্রহের জন্য কর্মকর্তারা প্রতিটি মিটারের বিপরীতে পাঁচ টাকা পান, তবুও অনেক সময় তারা সরেজমিনে না গিয়ে অনুমানের ভিত্তিতে বিল তৈরি করেন, যা অনিয়ম। এ বিষয়টি অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।"
সভায় গ্রাহকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরাসরি আলোচনা হয়। এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, "এক এলাকায় গাছ কাটা বা লাইনের কাজ চলাকালীন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়, কিন্তু এর প্রভাব আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকায় পড়ে, ফলে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হন। এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।"
এ প্রসঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, "আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো এবং ভবিষ্যতে যাতে এক এলাকার কাজের জন্য অন্য এলাকার গ্রাহকরা অপ্রয়োজনে ভোগান্তির শিকার না হন, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
গণমাধ্যমকর্মীরা বিদ্যুতের ‘ভৌতিক বিল’ নিয়ে প্রশ্ন তুললে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, "ভৌতিক বিল বলে কিছু নেই। প্রতিটি গ্রাহকের মিটার চেক করাই তার দায়িত্ব। যদি কেউ মনে করেন তার বিল বেশি আসছে, তাহলে নিজে মিটার দেখে নিশ্চিত হওয়া উচিত। তবে, আমরা স্বীকার করি যে, অনেক সময় কর্মকর্তারা মিটার রিডিং না নিয়েই বিল তৈরি করে দেন, যা অনিয়ম। এটি প্রতিরোধে আমরা আরও কঠোর হবো।"
সভায় উপস্থিত ছিলেন নেসকোর বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ গ্রাহক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা। গ্রাহকরা তাদের নানা সমস্যা উত্থাপন করেন এবং নেসকোর পক্ষ থেকে তা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফরিদুল হাসান বলেন, "নেসকো গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। আপনাদের যেকোনো অভিযোগ বা সমস্যার দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।"
এ ধরনের গ্রাহকশুনানি ও রাজস্ব সভার মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মতামত গ্রহণ ও সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন নেসকোর কর্মকর্তারা।
প্রকাশক ও সম্পাদক : জিল্লুর রহমান
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত