ইসমাইল আশরাফ,লালমনিরহাট প্রতিনিধি।।
লালমনিরহাট দক্ষিণ খোর্দ্দ সাপটানা ডায়াবেটিস মোড় এলাকায় মব জাস্টিসের প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে তিনটি পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে পরিবার তিনটির পক্ষে শাহাদাত হাবিব শাওন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় তার মা, বোন উপস্থিত ছিলেন। থানায় মামলা করার সুযোগ না পেয়ে আদালতে আর্জি দিয়েছে পরিবারটি।
সোমবার (১০মার্চ) রাত ১০টায় শহরের আল-সাদ হোটেল মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে জানা যায়, গত ৭ মার্চ শুক্রবার রাতে একটি গুজবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত কিছু যুবক শফিকুল ইসলামসহ আরো তিনজনের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হামলাকারিরা বাড়ীর স্বর্ণলাকার, নগদ টাকাসহ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। এ বিষয়ে সদর থানার ওসি নুরনবী বলেন, “তারা এখন পলাতক। তারা মামলা করবে কেমন করে”।
পরে মব জাস্টিস শিকার শফিকুল ইসলামের পরিবারটি লালমনিরহাট জজ কোর্টে আর্জি দাখিল করে। শফিকুলের পরিবারসহ আরো তিন বাড়ির পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এসময় মব জাস্টিসের শিকার পরিবারটি সরকারের সহায়তা কামনা করে।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ২০২৪ সালের ছোট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সুত্রপাত। আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা পরিবারের বেশ কিছু সদস্যকে কুপিয়ে জখম করে। বাসায় লুটপাট করে। তখনকার লালমনিরহাট ছাত্রলীগ সভাপতি বিলাসের সুপারিশে সেই সময়েও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে জানালে- তিনি আমাদের থানায় পাঠায় এবং মামলাটি নিতে বলেলেও মামলা নেয়নি সদর থানা। অনেক চেষ্টার পর কোর্টের মাধ্যমে আমরা একটি মামলা দায়ের করি এবং মামলাটির দায়িত্ব এসআই জাহিদুল ইসলামের কাছে কোর্ট হস্তান্তর করে।
এরই জেরে গত শুক্রবার ১.৩০ মিনিটে মসজিদে নামাজ পড়তে যায় ভুক্তভোগী তিন ভাই। ওই সময় সালামের ছেলে আমার ভাইদের দেখে নানা ধরনের কথা এবং হাসাহাসি করে পরে আমার ভাই সালামের ছেলে সিয়ামকে বলে ‘তুই এরকম করতেছিস কেন’। এ কথার উত্তরে সালামের ছেলে আমার তিন ভাইদের উদ্দেশ্যে বলে- তোর মাকে কোপাইছি, তোদের কি তবু শিক্ষা হয় নাই? এই কথা বলার পরে এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয় এবং আমার ভাইদের গায়ে হাত তোলে। পরে আমার ভাই’রা আইনের আশ্রয় নিতে থানার উদ্দেশ্যে যায় এবং থানা থেকে বলা হয় একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে। মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে আসার সময় তারা হাসপাতালে দিকে যায়। হাসপাতালে যাওয়ার সময় কুখ্যাত সন্ত্রাসী ভিক্ষু ও তার দলবল আমার দুই ভাইকে তুলে নিয়ে যায় এবং গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে।
পরে আমার ভাইরা বাসায় আসে এবং সন্ধ্যায় থানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। থানার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার সময় রাস্তায় সালামের ভাগ্নি সাদিয়া, মিঠু, মোহন, বাবুল্লা, নুরু মিয়া, রোহানসহ আরো তেলিপাড়ার কিছু সন্ত্রাসীসহ করে তাদের গতিরোধ করে। তাদেরকে থানার দিকে যেতে দেয় না এবং রাস্তাতেই তাদেরকে মারধর শুরু করে এমন অবস্থায় তারা বাসার দিকে দৌঁড়ায় এবং সালাম এর ভাগ্নি, সাদিয়া ফরিদ, চঞ্চল, মিঠু, জিসান, রোহান, ভিক্ষুসহ আরো অনেকে আমাদের বাসার সামনে আমাদের ভাইদের উপর হামলা চালায় এবং তাদের অনেক রক্তাক্ত করে। এই সময় সালামের ছেলে এবং রোহান এর হতাহতের ঘটনাটি কে বা কারা করলো, আমার ভাইরা কিছুই জানে না। পরবর্তীতে তারা এই হতাহত হতে ঘটনাটি আমাদের ভাই এবং বাবার নামে চালিয়ে দেয় এবং আমাদের বাসায় ভাঙচুর লুটপাট করে। এছাড়াও আমাদের বাসার মহিলাদের উপরও আক্রমণ করে। পরিকল্পিতভাবে এলাকাবাসী ও ওই সন্ত্রাসী সালাম, ভিক্ষু, জরিনা নামের একটি মহিলা সাংবাদিকদের সামনে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার করে বলে- আমার বাবা না-কি ডাইল ব্যবসায়ী, গাঁজা ব্যবসায়ী ইত্যাদি ধরনের আখ্যায়িত করে এলাকার মানুষদেরকে আমাদের বাড়ি ভাঙ্গার জন্য উৎসাহিত করে।
এই সময় আমি থানা থেকে পুলিশ পাঠিয়ে দিই। আমাদের বাসায় এবং তারা পুলিশকে না মেনে তারা বাড়ি-ঘর ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আমার চার ভাইকে হেফাজতে নেয়। আমি আইনের মাধ্যমে সঠিক তদন্ত করে এর যথাযথ বিচার চাই।