নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
লালমনিরহাট পৌরসভায় সড়ক সংস্কার কাজে উঠেছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণকাজ নিম্নমানের হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারা লিখিত অভিযোগ করেছেন জেলা প্রশাসনের নিকট। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৯ পৌরসভা সড়ক সংস্কার কাজ প্রকল্পের আওতায় লালমনিরহাট পৌরসভার সড়ক সংস্কার কাজ শুরু করে। সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। অভিযোগে জানা যায়, ওই কাজের আওতায় লালমনিরহাট পৌরসভায় কয়েকটি প্রকল্পে ১২ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে পৌরসভা এলাকার সাপটানা বাজার চৌমাথা থেকে পুঁটিমারীর দোলা সড়ক, রেলস্টেশন থেকে ফুলবাড়ী মোড়, আলোরুপা মোড় থেকে বিডিআরহাট, মোগলহাট রোড থেকে বিডিআরহাট, রেলস্টেশন থেকে মিশন মোড় সড়ক, ডাইলপট্রি মোড় থেকে বানভানা মোড়, জুম্মাপাড়া রোড, টিএন্ডটি মোড় থেকে বিজিবি ক্যান্টিন মোড়, সাকোয়া মোড় থেকে সৈয়দ মোড়, ছপরটারী মোড় থেকে ব্রিজ পর্যন্ত সহ বিভিন্ন সড়ক সংস্কার কাজ শুরু করে। সড়কগুলো সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয় ঠিকাদারের লোকজন। অভিযোগ উঠেছে জড়িত রয়েছে পৌর প্রকৌশল বিভাগের লোকজনও। মূল ঠিকাদার কাজ পেলেও টেন্ডার বিধিবহির্ভূতভাবে কাজ বিক্রি করে দেয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঠিকাদারের নিকট। তৃতীয় ঠিকাদার দায়সারা কাজ করছে। প্রথম মূল ঠিকাদার কাজ পেলেও কিছু টাকা নিয়ে কাজ বিক্রি করে। এতে করে নিম্নমানের দায়সারা কাজ করে ভায়া ঠিকাদাররা। এলাকাবাসীর অভিযোগ- রাস্তাগুলোর বেশির ভাগই বেজ পুরনো সড়কের খোয়া, পিচ দিয়ে করছে। দ্রুত ভেকু দিয়ে উল্টিয়ে বুলডেজার দিয়ে নিমিশেই দিচ্ছে ডলা। ঠিকাদারের লোকজন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে করছে কাজ। ইস্টিমেটের বিধি মোতাবেক ইটের খোয়া এক নাম্বার ইট দিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ইটের খোয়া। নিম্ন মানের ইটের খোয়া দিয়ে কাজ করায় সড়ক টেকসই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। প্রতিটি সড়কেই একই নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে হচ্ছে কাজ। অনেক স্থানে গাইড দেয়াল না দেয়ায় ড্রেনের দেয়ালকে ব্যবহার করছে গাইড দেয়াল হিসেবে। এতে করে ড্রেন দেয়ালগুলো পড়েছে হুমকিতে। অভিযোগ উঠে ইটের খোয়া দেড় ইঞ্চি করে সাইজের পরিবর্তে বড় বড় করে খোয়া দিয়ে দ্রুত বুলডোজার দিয়ে ডলা দেয়ায় নিম্নমানের কাজ করছে দায়সারাভাবে। সড়কের অনেক স্থানে খোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে রাবিশ। জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে তিনি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মোমেনকে প্রধান করে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীসহ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে রাস্তার খোয়া পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মোমেন জানান, ল্যাব থেকে ফলাফল আসলে নেয়া হবে ব্যবস্থা। ওদিকে বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলীর সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বললে তিনি দায়সারা কথা বলেন ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে। সাংবাদিকরা নিম্নমানের কাজ নিয়ে পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহবুবার রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানান।